newsbhuban25@gmail.com মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

মেটার ডেটা সেন্টারের কারণে শুষ্ক হচ্ছে টিউবওয়েল

নিউজ ভুবন ডেস্ক প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১১ এএম

পানি সংকটের পেছনে মেটার ডেটা সেন্টার

মেটার ডেটা সেন্টারের কারণে পানির সংকটে পড়েছেন স্থানীয়রা। ফলে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের নিউটন কাউন্টির প্রান্তে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের ডেটা সেন্টার নির্মাণ করার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যারা নলকূপের পানির ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা ভয়াবহ পানি সংকটে পড়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে, বেভারলি (৭১) এবং জেফ মরিস (৬৭) দম্পতির সংকটের কথা উল্লেখ করেছে। তাঁদের বাড়িটি মেটার ডেটা সেন্টার থেকে মাত্র ১ হাজার ফুট দূরে। ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরই বাড়ির পানির কল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই দম্পতি ইতিমধ্যে পানির সমস্যা সমাধানে ৫ হাজার ডলার খরচ করেছেন। নতুন নলকূপ বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় ২৫ হাজার ডলার জোগাড় করতে পারছেন না।

ডেটা সেন্টার এবং অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির কারণে পানির ব্যবহার যে হারে বেড়েছে, তাতে স্থানীয়দের জীবন ও সরকারি পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দুটোই হুমকির মুখে পড়েছে।

ডেটা সেন্টারগুলো শীতল রাখার জন্য দৈনিক বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করতে হয়। মেটা যেই আকারের ডেটা সেন্টার ব্যবহার করে তেমন একটি ডেটা সেন্টার সাধারণত দিনে ৫ লাখ গ্যালন পানি ব্যবহার করে। নতুন এআই-ভিত্তিক ডেটা সেন্টারগুলোতে প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন গ্যালন পানি লাগতে পারে। নিউটন কাউন্টিতে এই পরিমাণ পানি সরবরাহ করা অসম্ভব।

একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নিউটন কাউন্টি ২০৩০ সালের মধ্যে গুরুতর পানি সংকটের মুখে পড়তে চলেছে। এরই মধ্যে কাউন্টির ওয়াটার অথোরিটি আগামী দুই বছরের মধ্যে পানি বিল ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা স্বাভাবিক ২ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধির চেয়ে অনেক বেশি। যেখানে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টা পূর্বে অবস্থিত এই নিউটন কাউন্টির জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার।

মেটার প্রকল্পটি ছিল জর্জিয়ায় আসা প্রথম বড় ডেটা সেন্টার। ২০১৮ সালে এটির কাজ শুরু হয়, শেষ হয় গত বছর। রাজস্ব বৃদ্ধির আশায় স্থানীয় কর্মকর্তারা এই প্রকল্পগুলোতে উৎসাহ জুগিয়েছেন।

নিউটন কাউন্টি ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটির নির্বাহী পরিচালক মাইক হপকিন্স জানান, মেটার ডেটা সেন্টার বর্তমানে কাউন্টির মোট দৈনিক পানি ব্যবহারের প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবহার করছে। সম্প্রতি, নয়টি কোম্পানি নিউটন কাউন্টিতে ডেটা সেন্টার তৈরির আবেদন করেছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান দিনে ৬০ লাখ গ্যালন পর্যন্ত পানি চেয়েছে—যা কার্যত কাউন্টির পুরো দৈনিক ব্যবহারের সমান।

কাউন্টির পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষ তাদের পুনর্ব্যবহার সুবিধা উন্নত করতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচের একটি প্রায় অসম্ভব প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে, যাতে এই সংকট মোকাবিলা করা যায়।

অলাভজনক পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা চ্যাট্টাহুচি রিভারকিপার-এর ওয়াটার পলিসি ডিরেক্টর ক্রিস মাংগানিয়েলো জানিয়েছেন, ডেটা সেন্টার কোম্পানিগুলো সাধারণত তাদের পানি ব্যবহারের পরিমাণ প্রকাশ করে না। তিনি একসময় ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, একটি ডেটা সেন্টার কোম্পানি দিনে ৯০ লাখ গ্যালন পানি চেয়েছে, যা প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের দৈনিক ব্যবহারের সমান।

 

 

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


মেটার ডেটা সেন্টারের কারণে শুষ্ক হচ্ছে টিউবওয়েল

নিউজ ভুবন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০১ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১১ এএম

পানি সংকটের পেছনে মেটার ডেটা সেন্টার

মেটার ডেটা সেন্টারের কারণে পানির সংকটে পড়েছেন স্থানীয়রা। ফলে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।

প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের নিউটন কাউন্টির প্রান্তে ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের ডেটা সেন্টার নির্মাণ করার পর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে যারা নলকূপের পানির ওপর নির্ভরশীল, তাঁরা ভয়াবহ পানি সংকটে পড়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে, বেভারলি (৭১) এবং জেফ মরিস (৬৭) দম্পতির সংকটের কথা উল্লেখ করেছে। তাঁদের বাড়িটি মেটার ডেটা সেন্টার থেকে মাত্র ১ হাজার ফুট দূরে। ২০১৮ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কয়েক মাস পরই বাড়ির পানির কল শুকিয়ে যেতে শুরু করে। এই দম্পতি ইতিমধ্যে পানির সমস্যা সমাধানে ৫ হাজার ডলার খরচ করেছেন। নতুন নলকূপ বসানোর জন্য প্রয়োজনীয় ২৫ হাজার ডলার জোগাড় করতে পারছেন না।

ডেটা সেন্টার এবং অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির কারণে পানির ব্যবহার যে হারে বেড়েছে, তাতে স্থানীয়দের জীবন ও সরকারি পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দুটোই হুমকির মুখে পড়েছে।

ডেটা সেন্টারগুলো শীতল রাখার জন্য দৈনিক বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করতে হয়। মেটা যেই আকারের ডেটা সেন্টার ব্যবহার করে তেমন একটি ডেটা সেন্টার সাধারণত দিনে ৫ লাখ গ্যালন পানি ব্যবহার করে। নতুন এআই-ভিত্তিক ডেটা সেন্টারগুলোতে প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন গ্যালন পানি লাগতে পারে। নিউটন কাউন্টিতে এই পরিমাণ পানি সরবরাহ করা অসম্ভব।

একটি প্রতিবেদন অনুসারে, নিউটন কাউন্টি ২০৩০ সালের মধ্যে গুরুতর পানি সংকটের মুখে পড়তে চলেছে। এরই মধ্যে কাউন্টির ওয়াটার অথোরিটি আগামী দুই বছরের মধ্যে পানি বিল ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা স্বাভাবিক ২ শতাংশ বার্ষিক বৃদ্ধির চেয়ে অনেক বেশি। যেখানে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টা পূর্বে অবস্থিত এই নিউটন কাউন্টির জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার।

মেটার প্রকল্পটি ছিল জর্জিয়ায় আসা প্রথম বড় ডেটা সেন্টার। ২০১৮ সালে এটির কাজ শুরু হয়, শেষ হয় গত বছর। রাজস্ব বৃদ্ধির আশায় স্থানীয় কর্মকর্তারা এই প্রকল্পগুলোতে উৎসাহ জুগিয়েছেন।

নিউটন কাউন্টি ওয়াটার অ্যান্ড স্যুয়ারেজ অথোরিটির নির্বাহী পরিচালক মাইক হপকিন্স জানান, মেটার ডেটা সেন্টার বর্তমানে কাউন্টির মোট দৈনিক পানি ব্যবহারের প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবহার করছে। সম্প্রতি, নয়টি কোম্পানি নিউটন কাউন্টিতে ডেটা সেন্টার তৈরির আবেদন করেছে। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান দিনে ৬০ লাখ গ্যালন পর্যন্ত পানি চেয়েছে—যা কার্যত কাউন্টির পুরো দৈনিক ব্যবহারের সমান।

কাউন্টির পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষ তাদের পুনর্ব্যবহার সুবিধা উন্নত করতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচের একটি প্রায় অসম্ভব প্রকল্প বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু করেছে, যাতে এই সংকট মোকাবিলা করা যায়।

অলাভজনক পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা চ্যাট্টাহুচি রিভারকিপার-এর ওয়াটার পলিসি ডিরেক্টর ক্রিস মাংগানিয়েলো জানিয়েছেন, ডেটা সেন্টার কোম্পানিগুলো সাধারণত তাদের পানি ব্যবহারের পরিমাণ প্রকাশ করে না। তিনি একসময় ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, একটি ডেটা সেন্টার কোম্পানি দিনে ৯০ লাখ গ্যালন পানি চেয়েছে, যা প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের দৈনিক ব্যবহারের সমান।

 

 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর