newsbhuban25@gmail.com মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ক্ষমতাচ্যুতির পর বিশ্বের ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাসকগণ

নিউজ ভুবন ডেস্ক প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ২০:১১ পিএম

ক্ষমতাচ্যুতির পর বিশ্বের ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাসকগণ

রাজনৈতিক ইতিহাসে নেতাদের পতন অনেক সময় সহিংস ও নাটকীয় হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিরল ও প্রতিফলিত ঘটনা হলো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের আনুষ্ঠানিক বা বিচারিক মৃত্যুদণ্ড। সাধারণত বিপ্লব, অভ্যুত্থান, গৃহযুদ্ধ বা গণহত্যার বিচারের পর এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

আদালতের রায় বা বিপ্লবীদের হাতে এমন বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহ, সংবিধান লঙ্ঘন থেকে শুরু করে বিদেশি শক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্র—বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ফায়ারিং স্কোয়াড, ফাঁসি, গিলোটিনের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল এসব নেতার।

সাদ্দাম হোসেন (ইরাক, ১৯৭৯–২০০৩)
যুক্তরাষ্ট্র–নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর দুজাইল গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইরাকি ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এটি আধুনিক রাষ্ট্রপ্রধানদের সবচেয়ে আলোচিত মৃত্যুদণ্ডগুলোর একটি।

নিকোলায় চাউশেস্কু (রুমানিয়া, ১৯৬৫–১৯৮৯)
২৪ বছর শাসন শেষে রুমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসক চাউশেস্কু ও তার স্ত্রী দ্রুতগতির সামরিক ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন গণহত্যা ও অর্থনৈতিক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য। বড়দিনে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এটি আধুনিক রুমানিয়ার শেষ মৃত্যুদণ্ড হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত।

ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লস
১৬৪৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসকে শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং পার্লামেন্টের সঙ্গে বিরোধের জেরে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তার এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাজা প্রথম চার্লসের মৃত্যুদণ্ড ইংরেজ গৃহযুদ্ধের পরিণতি এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের জন্ম দেয়, যা আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে।

ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই
১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি, ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইকে প্যারিসের রিভোল্যুশনারি ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ফরাসি বিপ্লবের সময় রাজতান্ত্রিক শাসন এবং জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই ঘটনা বিপ্লবীদের জয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা ইউরোপীয় রাজতন্ত্রের পতনের সূচনা করে।

হাঙ্গেরির ইমরে ন্যাগি
১৯৫৮ সালের ১৬ জুন বুদাপেস্টে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় হাঙ্গেরির সমাজতান্ত্রিক নেতা ইমরে ন্যাগির। ১৯৫৬ সালের ব্যর্থ বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে এটি একটি ‘শো ট্রায়াল’ হিসেবে পরিচিত, যা পরবর্তীকালে হাঙ্গেরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি নিজেরাই অবৈধ বলে স্বীকার করে।

ইরানের আমির-আব্বাস হোবেইদা
১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমির-আব্বাস হোবেইদাকে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং দুর্নীতির অভিযোগে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির অধীন হোবেইদার সরকারকে বিপ্লবীদের ‘দমনকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

জুলফিকার আলী ভুট্টো (পাকিস্তান, ১৯৭১–১৯৭৭)
প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ভুট্টোকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ১৯৭৯ সালে বিতর্কিত হত্যা মামলায় তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তার বিচারের মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ ঘোষণা করে, যা মরণোত্তর পুনর্বাসনের উদাহরণ।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া, ১৯৬৯–২০১১)
৪২ বছরের শাসন শেষে গাদ্দাফিকে আদালতের রায় ছাড়াই আটক এবং তাৎক্ষণিক হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত অবস্থায় পড়ে।

চুন দু-হোয়ান (দক্ষিণ কোরিয়া, ১৯৭৯–১৯৮৭)
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসন শেষে চুনকে ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থান ও গওয়াংজু দমন-পীড়ণের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। পরে তা বাতিল হয়ে তিনি ক্ষমা পান।

জোসেফ কাবিলা (ডিআর কঙ্গো, ২০০১–২০১৯)
২০২৫ সালে সামরিক আদালত তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদ্রোহ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তিনি গ্রেপ্তার হননি এবং অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

 

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


ক্ষমতাচ্যুতির পর বিশ্বের ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাসকগণ

নিউজ ভুবন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ২০:১১ পিএম

ক্ষমতাচ্যুতির পর বিশ্বের ইতিহাসে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শাসকগণ

রাজনৈতিক ইতিহাসে নেতাদের পতন অনেক সময় সহিংস ও নাটকীয় হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিরল ও প্রতিফলিত ঘটনা হলো কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের আনুষ্ঠানিক বা বিচারিক মৃত্যুদণ্ড। সাধারণত বিপ্লব, অভ্যুত্থান, গৃহযুদ্ধ বা গণহত্যার বিচারের পর এ ধরনের ঘটনা ঘটে।

আদালতের রায় বা বিপ্লবীদের হাতে এমন বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, রাষ্ট্রদ্রোহ, সংবিধান লঙ্ঘন থেকে শুরু করে বিদেশি শক্তির সঙ্গে ষড়যন্ত্র—বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ফায়ারিং স্কোয়াড, ফাঁসি, গিলোটিনের মতো পদ্ধতি ব্যবহার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল এসব নেতার।

সাদ্দাম হোসেন (ইরাক, ১৯৭৯–২০০৩)
যুক্তরাষ্ট্র–নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর দুজাইল গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইরাকি ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এটি আধুনিক রাষ্ট্রপ্রধানদের সবচেয়ে আলোচিত মৃত্যুদণ্ডগুলোর একটি।

নিকোলায় চাউশেস্কু (রুমানিয়া, ১৯৬৫–১৯৮৯)
২৪ বছর শাসন শেষে রুমানিয়ার কমিউনিস্ট শাসক চাউশেস্কু ও তার স্ত্রী দ্রুতগতির সামরিক ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হন গণহত্যা ও অর্থনৈতিক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের জন্য। বড়দিনে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। এটি আধুনিক রুমানিয়ার শেষ মৃত্যুদণ্ড হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত।

ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লস
১৬৪৯ সালের ৩০ জানুয়ারি, ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসকে শিরশ্ছেদ করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং পার্লামেন্টের সঙ্গে বিরোধের জেরে রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তার এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাজা প্রথম চার্লসের মৃত্যুদণ্ড ইংরেজ গৃহযুদ্ধের পরিণতি এবং সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের জন্ম দেয়, যা আধুনিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে।

ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই
১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি, ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইকে প্যারিসের রিভোল্যুশনারি ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। ফরাসি বিপ্লবের সময় রাজতান্ত্রিক শাসন এবং জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তাকে গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এই ঘটনা বিপ্লবীদের জয়ের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়, যা ইউরোপীয় রাজতন্ত্রের পতনের সূচনা করে।

হাঙ্গেরির ইমরে ন্যাগি
১৯৫৮ সালের ১৬ জুন বুদাপেস্টে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় হাঙ্গেরির সমাজতান্ত্রিক নেতা ইমরে ন্যাগির। ১৯৫৬ সালের ব্যর্থ বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে এটি একটি ‘শো ট্রায়াল’ হিসেবে পরিচিত, যা পরবর্তীকালে হাঙ্গেরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি নিজেরাই অবৈধ বলে স্বীকার করে।

ইরানের আমির-আব্বাস হোবেইদা
১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমির-আব্বাস হোবেইদাকে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং দুর্নীতির অভিযোগে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির অধীন হোবেইদার সরকারকে বিপ্লবীদের ‘দমনকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

জুলফিকার আলী ভুট্টো (পাকিস্তান, ১৯৭১–১৯৭৭)
প্রেসিডেন্ট ও পরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ভুট্টোকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। ১৯৭৯ সালে বিতর্কিত হত্যা মামলায় তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট তার বিচারের মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ ঘোষণা করে, যা মরণোত্তর পুনর্বাসনের উদাহরণ।

মুয়াম্মার গাদ্দাফি (লিবিয়া, ১৯৬৯–২০১১)
৪২ বছরের শাসন শেষে গাদ্দাফিকে আদালতের রায় ছাড়াই আটক এবং তাৎক্ষণিক হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় লিবিয়া রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত অবস্থায় পড়ে।

চুন দু-হোয়ান (দক্ষিণ কোরিয়া, ১৯৭৯–১৯৮৭)
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক শাসন শেষে চুনকে ১৯৭৯ সালের অভ্যুত্থান ও গওয়াংজু দমন-পীড়ণের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। পরে তা বাতিল হয়ে তিনি ক্ষমা পান।

জোসেফ কাবিলা (ডিআর কঙ্গো, ২০০১–২০১৯)
২০২৫ সালে সামরিক আদালত তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ, বিদ্রোহ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অনুপস্থিতিতে মৃত্যুদণ্ড দেয়। তিনি গ্রেপ্তার হননি এবং অভিযোগ অস্বীকার করছেন।

 

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর