newsbhuban25@gmail.com মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

চোখ ধাঁধানো সমরাস্ত্রে সজ্জিত চীনের চাওয়াটা কী

নিউজ ভুবন ডেস্ক প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

প্রযুক্তিতে চমক লাগিয়ে দেওয়ার মতো উন্নতি করছে চীন । চোখ ধাঁধানো সমরাস্ত্রে সজ্জিত চীনের আসলে চাওয়াটা কী।

১৯০০০০০০০০০০০০ মার্কিন ডলার। হাতে গোনা কঠিন হচ্ছে? সংক্ষেপে বললে হয় ১৯ ট্রিলিয়ন ডলার। চীনের জিডিপি তারও বেশি। অর্থনীতিতে তার চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই দেশের ধারেকাছেও কেউ নেই। আর সমরশক্তি? এখানে চীনের আগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবে মাও সে–তুংয়ের দেশ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে রাশিয়াকে টপকে যেতে হয়তো তাদের বেশি সময় লাগবে না।

চীন বড় তাক লাগিয়ে দিয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূ্র্তি উপলক্ষে বিশাল সমরাস্ত্র প্রদর্শনীর (বিজয় কুচকাওয়াজ) আয়োজন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। প্রযুক্তির মিশেলে অস্ত্র যে কতটা অত্যাধুনিক ও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তা দেখা গেছে ওই প্রদর্শনীতে। একটি অস্ত্রের নামই তো দেওয়া হয়েছে ‘গুয়াম কিলার’। এমন নাম যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সরাসরি হুমকি।

গুয়াম কিলার কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি, সে বিষয়ে পরে আসছি। তার আগে কিছু প্রশ্ন সামনে আসে। গত ৪০ বছর যুদ্ধে না জড়ানো চীন কেন অস্ত্রশস্ত্রের দিকে এত ব্যাপক হারে মনোযোগ দিচ্ছে? তারা আসলে চাচ্ছেটা কী? সমরাস্ত্র আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে চীন কি সবাইকে টপকে পশ্চিমা আধিপত্যকে চুরমার করতে চাচ্ছে? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক এসব প্রশ্নের জবাব।

*সমরাস্ত্র উন্নয়ন শুরুটা যেভাবে
সমরাস্ত্রে চীনের দুর্বলতাটা ব্যাপক আকারে প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৯৬ সালে তাইওয়ান প্রণালি সংকট ও উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। তখন স্বাধীনতা ঘোষণার দিকে এগোচ্ছে তাইওয়ান। তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ মনে করে চীন। হুমকি দেওয়ার জন্য তাই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল বেইজিং। চীনের এই কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে তাইওয়ান প্রণালিতে দুটি বিমানবাহী রণতরি মোতায়েন করেছিল তাইপের মিত্র ওয়াশিংটন।

সে সময়ও সামরিক প্রযুক্তিতে বিশ্বে একক অধিপত্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন বাহিনীর সামনে টিকতে পারেনি দুর্বল চীন। দেশটির হাতে ছিল সোভিয়েত আমলের সেকেলে অস্ত্রশস্ত্র। এমনকি তাইওয়ান প্রণালিতে মার্কিন বাহিনী যে গোপনে সাবমেরিন মোতায়েন করে রেখেছে, তা–ও ঘুণাক্ষরে টের পায়নি চীন। বেইজিং তখন বুঝতে পারে, সামরিক বাহিনীর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে তাদের।

চীন যদিও কিছু আগে থেকেই সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছিল। ১৯৮৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত চীনা সামরিক বাহিনীতে বড় সংস্কার আনা হয়। প্রতিবছরই প্রতিরক্ষা বাজেট ১০ শতাংশ করে বাড়ানো হয়েছিল। তখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন জিয়াং জেমিন। ওই সংস্কারই ছিল আজকের আধুনিক চীনা বাহিনীর মূল ভিত্তি।

আজকের দিনে সমর খাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও যোগ করছে চীন। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এআইয়ে চীন যে কতটা উন্নতি করেছে, তা তাদের চ্যাটবট ডিপসিক দেখলে বোঝা যায়। এমন সব প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তৈরি চীনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০ গত জুনে সুশিমা প্রণালি দিয়ে উড়ে যায়।

আশপাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শক্তিশালী রাডার থাকলেও সেগুলো জে–২০ যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি টের পায়নি। আর সবচেয়ে আধুনিক ষষ্ঠ প্রজন্মের জে-৩৬ যুদ্ধবিমান চীন তৈরি করেছে, তা শেষ পর্যন্ত টিকে গেলে কৌশলগতভাবে বহু এগিয়ে যাবে এশিয়ার দেশটি।

চীন সাধারণত প্রতি ১০ বছর পরপর বিজয় কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগে ২০১৫ সালে এমন বিরাট কুচকাওয়াজ হয়েছিল। সে বছর নিজেদের পরমাণু বোমা বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রদর্শন করেছিল দেশটি। পরে ২০১৯ সালে আরেক প্রদর্শনীতে প্রথমবারের মতো নিজেদের ড্রোন সক্ষমতার জানান দেয় চীন। আর এবারের প্রদর্শনীতে কী দেখায়নি চীন!

এবার বিজয় কুচকাওয়াজে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে ছিল ডংফেং-৬১ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো একসঙ্গে একাধিক ধরনের বোমা বহন করতে পারে। কুচকাওয়াজে থাকা ডংফেং-৫সি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) চীনের পূর্ব উপকূল থেকে উৎক্ষেপণ হলে, তা ১১ হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারে।

আর শুরুতে যে গুয়াম কিলারের কথা বলা হয়েছে, সেটি দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়াম দ্বীপে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি তছনছ করে দেওয়া সম্ভব।

সেপ্টেম্বরের কুচকাওয়াজে দেখানো হয়েছে হাইপারসনিক বা শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটে যেতে সক্ষম ওয়াইজে–১৭ ও ওয়াইজে–১৯ ক্ষেপণাস্ত্র। এসব ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজ ধ্বংস করতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, নৌশক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে চীন।

তবে মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী হলেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক। এই দুর্বলতাটাকে কাজে লাগাতে হাইপারসনিকের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে মন দিয়েছে চীন।

হলিউড বিভিন্ন সিনেমায় আমরা লেজার অস্ত্রের ব্যবহার দেখেছি। সে ধরনের অস্ত্রই এ বছরের কুচকাওয়াজে প্রদর্শন করেছে চীন। এলওয়াই–১ নামের বিশাল এই লেজার অস্ত্রগুলো প্রতিপক্ষের ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিমেষেই ধ্বংস করে দিতে পারে। এমনকি অন্ধ করে দিতে পারে শত্রু যুদ্ধবিমানের পাইলটকে।

চীনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০ গত জুনে সুশিমা প্রণালি দিয়ে উড়ে যায়। আশপাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শক্তিশালী রাডার থাকলেও, সেগুলো ওই যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি টের পায়নি।
আর শত্রুপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে চীন তৈরি করেছে নেকড়ের মতো দেখতে বিচিত্র রোবট। এগুলো শত্রুসেনাদের ওপর হামলা চালাতে পারে, মাইন খুঁজে বের করতে পারে, প্রয়োজন পড়লে নজরদারিও করতে পারে।

এ ছাড়া এমন একটি সাবমেরিন সামনে এনেছে চীন, যেটি চালক ছাড়াই (ড্রোন) চলাচল করতে পারবে। এজেএক্স–০০২ নামের বিরাট এই সাবমেরিনটি নজরদারি করতে পারবে শত্রুপক্ষের ওপর।

পাশাপাশি ড্রোন আকাশযানের বিশাল এক বহর প্রদর্শন করেছে বেইজিং। সেগুলোর বেশ কয়েকটি পরিচালনা করা হয় এআইয়ের মাধ্যমে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জিজে–১১ নামের একটি হামলাকারী ড্রোন। সেগুলো স্টেলথ বা রাডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে হামলা চালাতে পারে। একই সঙ্গে সহায়তা করতে পারে যুদ্ধবিমানের অভিযানে।

*সমরশক্তিতে চীনের অবস্থান কোথায়
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’। গত ১৫ বছর ধরে সামরিক সক্ষমতায় এগিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। ২০২৫ সালেও ব্যতিক্রম নয়।

তবে চলতি বছরের প্রতিবেদনে যে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) তৈরি করা হয়েছে, সেখানে চীন ও রাশিয়ার পয়েন্ট একই—শূন্য দশমিক শূন্য ৭৮৮। অর্থাৎ সামান্য অগ্রগতি করলেই মস্কোকে ছাড়িয়ে যাবে বেইজিং।

চলুন ২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক অনুযায়ী কার সামরিক সক্ষমতা কত, তা দেখে নেওয়া যাক। স্থল, বিমান ও নৌবাহিনী মিলিয়ে চীনের মতো সেনা সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেই। বর্তমানে চীনের সক্রিয় সেনাসদস্য ৩৩ লাখের বেশি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্য ২৭ লাখের বেশি। রাশিয়ার সেনা বেশ কম, প্রায় ৯ লাখ।

স্থলবাহিনীতে চীনের ট্যাংকের সংখ্যা ৬ হাজার ৮০০টি। সাঁজোয়াযান রয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি। কামান রয়েছে ৪ হাজার ৪৯০টি। আর রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ২ হাজার ৭৫০টি। স্থলবাহিনীতে শুধু সাঁজোয়াযান বাদে বাকি সব ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আর কামান ও রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা বাদে বাকি অস্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে রাশিয়া।

নৌবাহিনীর সক্ষমতার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও রাশিয়ার চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে চীন। দেশটির বিমানবাহী রণতরি রয়েছে ৩টি। হেলিকপ্টারবাহী রণতরি রয়েছে ৪টি। শক্তিশালী ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ৫০টি। ফ্রিগেট ও করভেট রয়েছে ৪৭ ও ৭২টি। সাবমেরিনের সংখ্যা ৬১।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের পরমাণু অস্ত্র ছিল ৬০০টি। আর আগের বছর ছিল ৫০০টি।
তবে বিমানবাহিনীর সক্ষমতার দিক দিয়ে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে বেশ পিছিয়ে আছে চীন। দেশটির মোট আকাশযান ৩ হাজার ৩০৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ১ হাজার ২১২টি। হেলিকপ্টার ৯১৩টি। বিশেষ অভিযানে ব্যবহারের জন্য আকাশযান ১১২টি এবং প্রশিক্ষণ বিমান ৪০২টি।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া—তিন দেশেরই পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের পরমাণু অস্ত্র ছিল ৬০০টি। আর আগের বছর ছিল ৫০০টি।

অর্থাৎ পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি করছে চীন। অন্যদিকে চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ছিল যথাক্রমে ৫ হাজার ১৭৭ ও ৫ হাজার ৪৫৯টি, যা ২০২৪ সালে দেশ দুটির হাতে থাকা পরমাণু অস্ত্রের তুলনায় কম।


*চীন কি বিশ্বনেতা হতে চাচ্ছে
সেপ্টেম্বরের বিজয় কুচকাওয়াজে শুধু অস্ত্র প্রদর্শনীই করেনি চীন, সেদিন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পাশে ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ ২৬টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন যে ভবিষ্যৎ বিশ্বব্যবস্থার নেতা হতে যাচ্ছে, বিজয় কুচকাওয়াজ তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।

চীন যে বিশ্বনেতা হওয়ার দিকে এগোচ্ছে, তা বোঝা যায় ২০২৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশটির পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দিকে তাকালেই। এই পরিকল্পনায় সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির ওপর বিদেশি নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছে বেইজিং। তাদের লক্ষ্য—অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা কাটাতে দেশীয়ভাবে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করা।

গত মে মাসে সংঘাতের সময় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল পাকিস্তান। ভারত তা নাকচ করলেও, তাদের অন্তত একটি যুদ্ধবিমান যে ধ্বংস হয়েছিল, তা নিশ্চিত।
সেমিকন্ডাক্টর অত্যাধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এফ–২২ ও এফ–৩৫, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার ব্যবস্থা ও এআইয়ের চিপ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় এই সেমিকন্ডাক্টর।

চীনের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ হলো, সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে যে বিরল খনিজের প্রয়োজন পড়ে, তার ৬০ শতাংশই রয়েছে তাদের দখলে। এরই মধ্যে গত অক্টোবরে বিভিন্ন বিরল খনিজের ওপর নতুন করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেইজিং। লক্ষ্য একটাই—সেমিকন্ডাক্টর খাতে আধিপত্য সৃষ্টি করা।

রাজনৈতিকভাবেও ধীরে ধীরে নেতৃত্বের ভূমিকায় যেতে চলেছে চীন। এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে ব্রিকস ও সাংহাই কো–অপারেশনের (এসসিও) মতো জোট ও প্ল্যাটফর্মগুলোকে। চীন যে বিশাল বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআইআই) প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তাতে সই করেছে ১৫৩টি দেশ। এর মাধ্যমেও নিজের প্রভাব বিস্তার করছে সি চিন পিংয়ের দেশ। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে প্রভাব বাড়াতে চীনের বিনিয়োগে নানা মেগা প্রকল্প তো আছেই।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস বলছে, এমন সব কৌশল হাতে নিয়ে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে অর্থনীতির দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। আর দেশটি যেভাবে অস্ত্রশস্ত্রের উন্নতি করছে, তা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।

শুধু সর্বাধুনিক ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান দিয়েই এই মাথাব্যথার কারণের জবাবটা দেওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রও এই যুদ্ধবিমান নিয়ে গবেষণা করছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নমুনা সামনে আনতে পারেনি। অপর দিকে যষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-৩৬-এর নমুনা আকাশে উড়িয়ে দাবার চালে এগিয়ে রয়েছে চীন।

রেনেসাঁ যুগের দার্শনিক নিকোলো মাকিয়াভেল্লি বলেছিলেন, ক্ষমতাধররা কখনোই তার সমকক্ষ চায় না। চায় না কেউ তাকে ছাপিয়ে যাক। তাহলে তো গদি নড়ে যাবে।

তবে বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমনির্ভর যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার গদি নড়াতেই চীন মহাপরিকল্পনা করছে বলে মনে করেন বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের গবেষক ক্লাউয়াস সুং। তাঁর মতে, চীনের দিক দিয়ে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় সংস্কারটা জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ, এই ব্যবস্থার অধীনে ঘন ঘন বৈশ্বিক সংকট দেখা দিচ্ছে, আর বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।


*অন্য কোনো লাভ আছে কি
অস্ত্রের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে চীনের আরও একটি লাভ আছে। সেটি কী? একটু পেছনে যাই। গত মে মাসে সংঘাতের সময় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল পাকিস্তান। ভারত তা নাকচ করলেও, তাদের অন্তত একটি যুদ্ধবিমান যে ধ্বংস হয়েছিল, তা নিশ্চিত। সদ্য ফ্রান্সের কাছ থেকে ভারত অত্যাধুনিক ওই রাফাল যুদ্ধবিমানটি কিনেছিল। সেটি ধ্বংস করেছিল পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি জে-১০ চীনা যুদ্ধবিমান।

চীনের তৈরি অস্ত্র নিয়ে পশ্চিমারা নাক সিঁটকালেও জে-১০-এর হাতে রাফাল ধ্বংসের খবর তখন সারা বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। জে-১০-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চেংদুর শেয়ারের দাম একলাফে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। জে-১০ এতটাই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে যে শিগগিরই এই যুদ্ধবিমানটি কিনতে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশও এই যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সম্প্রতি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন প্রতিনিধি।

যদিও এখন পর্যন্ত অস্ত্র রপ্তানি বাজারে চীনের অংশীদারত্ব খুবই কম। সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) হিসাবে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে অস্ত্র রপ্তানিতে চীন চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও এ সময়ে মোট অস্ত্রের মাত্র ৫ দশমিক ৮ শতাংশ রপ্তানি করেছিল দেশটি। অস্ত্রগুলোর ৮৫ শতাংশ গিয়েছিল এশিয়ার দেশগুলোতে। এর মধ্যে আবার ৬১ শতাংশ কিনেছিল মাত্র একটি দেশে—পাকিস্তান।

তবে আজকের দিনে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চল চীনা অস্ত্রের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্ত্র বাজারেও প্রবেশ করছে চীন।

রাফাল ভূপাতিত করার পর জে-১০-এর চাহিদা বৃদ্ধির দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। এ ছাড়া গত রোববার পাকিস্তানের নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফ বলেছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে চীন থেকে আটটি হানগর-ক্লাস সাবমেরিন কেনার জন্য একটি চুক্তি করেছেন তাঁরা। চীনের অস্ত্র যদি এখন আরও অত্যাধুনিক হয়, তার বিক্রিও যে বাড়বে, সে বিষয়ে খুব বেশি সন্দেহ নেই।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের গবেষক জ্যাকব গান্টারের মতে, রপ্তানি করা এই অস্ত্রগুলোও একধরনের ভূরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বেইজিং। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে। ওই দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। আর এভাবেই পশ্চিমা আধিপত্য ঠেকানোর লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি জোট তৈরি করছে।

২০৪৯ সালে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের শততম বার্ষিকী। ওই বছরটিকে সামনে রেখে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এক স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। তা হলো—শততম বর্ষে চীনকে একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক-শক্তিশালী-সভ্য দেশে পরিণত করা। এখন চীন যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা চলে সিয়ের লক্ষ্য পূরণে হয়তো খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, ডিপ্লোম্যাট, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজ, রয়টার্স, গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


চোখ ধাঁধানো সমরাস্ত্রে সজ্জিত চীনের চাওয়াটা কী

নিউজ ভুবন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২৫ ১২:১১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

প্রযুক্তিতে চমক লাগিয়ে দেওয়ার মতো উন্নতি করছে চীন । চোখ ধাঁধানো সমরাস্ত্রে সজ্জিত চীনের আসলে চাওয়াটা কী।

১৯০০০০০০০০০০০০ মার্কিন ডলার। হাতে গোনা কঠিন হচ্ছে? সংক্ষেপে বললে হয় ১৯ ট্রিলিয়ন ডলার। চীনের জিডিপি তারও বেশি। অর্থনীতিতে তার চেয়ে এগিয়ে আছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। এই দুই দেশের ধারেকাছেও কেউ নেই। আর সমরশক্তি? এখানে চীনের আগে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। তবে মাও সে–তুংয়ের দেশ যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে রাশিয়াকে টপকে যেতে হয়তো তাদের বেশি সময় লাগবে না।

চীন বড় তাক লাগিয়ে দিয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূ্র্তি উপলক্ষে বিশাল সমরাস্ত্র প্রদর্শনীর (বিজয় কুচকাওয়াজ) আয়োজন করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। প্রযুক্তির মিশেলে অস্ত্র যে কতটা অত্যাধুনিক ও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তা দেখা গেছে ওই প্রদর্শনীতে। একটি অস্ত্রের নামই তো দেওয়া হয়েছে ‘গুয়াম কিলার’। এমন নাম যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সরাসরি হুমকি।

গুয়াম কিলার কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি, সে বিষয়ে পরে আসছি। তার আগে কিছু প্রশ্ন সামনে আসে। গত ৪০ বছর যুদ্ধে না জড়ানো চীন কেন অস্ত্রশস্ত্রের দিকে এত ব্যাপক হারে মনোযোগ দিচ্ছে? তারা আসলে চাচ্ছেটা কী? সমরাস্ত্র আধুনিকায়নের মধ্য দিয়ে চীন কি সবাইকে টপকে পশ্চিমা আধিপত্যকে চুরমার করতে চাচ্ছে? নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? চলুন জেনে নেওয়া যাক এসব প্রশ্নের জবাব।

*সমরাস্ত্র উন্নয়ন শুরুটা যেভাবে
সমরাস্ত্রে চীনের দুর্বলতাটা ব্যাপক আকারে প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৯৬ সালে তাইওয়ান প্রণালি সংকট ও উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। তখন স্বাধীনতা ঘোষণার দিকে এগোচ্ছে তাইওয়ান। তাইওয়ানকে নিজ ভূখণ্ডের অংশ মনে করে চীন। হুমকি দেওয়ার জন্য তাই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল বেইজিং। চীনের এই কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে তাইওয়ান প্রণালিতে দুটি বিমানবাহী রণতরি মোতায়েন করেছিল তাইপের মিত্র ওয়াশিংটন।

সে সময়ও সামরিক প্রযুক্তিতে বিশ্বে একক অধিপত্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিন বাহিনীর সামনে টিকতে পারেনি দুর্বল চীন। দেশটির হাতে ছিল সোভিয়েত আমলের সেকেলে অস্ত্রশস্ত্র। এমনকি তাইওয়ান প্রণালিতে মার্কিন বাহিনী যে গোপনে সাবমেরিন মোতায়েন করে রেখেছে, তা–ও ঘুণাক্ষরে টের পায়নি চীন। বেইজিং তখন বুঝতে পারে, সামরিক বাহিনীর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে তাদের।

চীন যদিও কিছু আগে থেকেই সামরিক বাহিনীকে আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছিল। ১৯৮৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত চীনা সামরিক বাহিনীতে বড় সংস্কার আনা হয়। প্রতিবছরই প্রতিরক্ষা বাজেট ১০ শতাংশ করে বাড়ানো হয়েছিল। তখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন জিয়াং জেমিন। ওই সংস্কারই ছিল আজকের আধুনিক চীনা বাহিনীর মূল ভিত্তি।

আজকের দিনে সমর খাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিও যোগ করছে চীন। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। এআইয়ে চীন যে কতটা উন্নতি করেছে, তা তাদের চ্যাটবট ডিপসিক দেখলে বোঝা যায়। এমন সব প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তৈরি চীনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০ গত জুনে সুশিমা প্রণালি দিয়ে উড়ে যায়।

আশপাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শক্তিশালী রাডার থাকলেও সেগুলো জে–২০ যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি টের পায়নি। আর সবচেয়ে আধুনিক ষষ্ঠ প্রজন্মের জে-৩৬ যুদ্ধবিমান চীন তৈরি করেছে, তা শেষ পর্যন্ত টিকে গেলে কৌশলগতভাবে বহু এগিয়ে যাবে এশিয়ার দেশটি।

চীন সাধারণত প্রতি ১০ বছর পরপর বিজয় কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগে ২০১৫ সালে এমন বিরাট কুচকাওয়াজ হয়েছিল। সে বছর নিজেদের পরমাণু বোমা বহনকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রদর্শন করেছিল দেশটি। পরে ২০১৯ সালে আরেক প্রদর্শনীতে প্রথমবারের মতো নিজেদের ড্রোন সক্ষমতার জানান দেয় চীন। আর এবারের প্রদর্শনীতে কী দেখায়নি চীন!

এবার বিজয় কুচকাওয়াজে বড় আকর্ষণগুলোর মধ্যে ছিল ডংফেং-৬১ ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো একসঙ্গে একাধিক ধরনের বোমা বহন করতে পারে। কুচকাওয়াজে থাকা ডংফেং-৫সি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) চীনের পূর্ব উপকূল থেকে উৎক্ষেপণ হলে, তা ১১ হাজার কিলোমিটার পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে পারে।

আর শুরুতে যে গুয়াম কিলারের কথা বলা হয়েছে, সেটি দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের গুয়াম দ্বীপে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটি তছনছ করে দেওয়া সম্ভব।

সেপ্টেম্বরের কুচকাওয়াজে দেখানো হয়েছে হাইপারসনিক বা শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতিতে ছুটে যেতে সক্ষম ওয়াইজে–১৭ ও ওয়াইজে–১৯ ক্ষেপণাস্ত্র। এসব ক্ষেপণাস্ত্র জাহাজ ধ্বংস করতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, নৌশক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে চীন।

তবে মার্কিন নৌবাহিনী শক্তিশালী হলেও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক। এই দুর্বলতাটাকে কাজে লাগাতে হাইপারসনিকের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে মন দিয়েছে চীন।

হলিউড বিভিন্ন সিনেমায় আমরা লেজার অস্ত্রের ব্যবহার দেখেছি। সে ধরনের অস্ত্রই এ বছরের কুচকাওয়াজে প্রদর্শন করেছে চীন। এলওয়াই–১ নামের বিশাল এই লেজার অস্ত্রগুলো প্রতিপক্ষের ইলেকট্রনিক যন্ত্র নিমেষেই ধ্বংস করে দিতে পারে। এমনকি অন্ধ করে দিতে পারে শত্রু যুদ্ধবিমানের পাইলটকে।

চীনের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-২০ গত জুনে সুশিমা প্রণালি দিয়ে উড়ে যায়। আশপাশে থাকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শক্তিশালী রাডার থাকলেও, সেগুলো ওই যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি টের পায়নি।
আর শত্রুপক্ষকে নাস্তানাবুদ করতে চীন তৈরি করেছে নেকড়ের মতো দেখতে বিচিত্র রোবট। এগুলো শত্রুসেনাদের ওপর হামলা চালাতে পারে, মাইন খুঁজে বের করতে পারে, প্রয়োজন পড়লে নজরদারিও করতে পারে।

এ ছাড়া এমন একটি সাবমেরিন সামনে এনেছে চীন, যেটি চালক ছাড়াই (ড্রোন) চলাচল করতে পারবে। এজেএক্স–০০২ নামের বিরাট এই সাবমেরিনটি নজরদারি করতে পারবে শত্রুপক্ষের ওপর।

পাশাপাশি ড্রোন আকাশযানের বিশাল এক বহর প্রদর্শন করেছে বেইজিং। সেগুলোর বেশ কয়েকটি পরিচালনা করা হয় এআইয়ের মাধ্যমে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জিজে–১১ নামের একটি হামলাকারী ড্রোন। সেগুলো স্টেলথ বা রাডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে হামলা চালাতে পারে। একই সঙ্গে সহায়তা করতে পারে যুদ্ধবিমানের অভিযানে।

*সমরশক্তিতে চীনের অবস্থান কোথায়
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক সক্ষমতা নিয়ে প্রতিবছর প্রতিবেদন প্রকাশ করে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’। গত ১৫ বছর ধরে সামরিক সক্ষমতায় এগিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন। ২০২৫ সালেও ব্যতিক্রম নয়।

তবে চলতি বছরের প্রতিবেদনে যে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) তৈরি করা হয়েছে, সেখানে চীন ও রাশিয়ার পয়েন্ট একই—শূন্য দশমিক শূন্য ৭৮৮। অর্থাৎ সামান্য অগ্রগতি করলেই মস্কোকে ছাড়িয়ে যাবে বেইজিং।

চলুন ২০২৫ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক অনুযায়ী কার সামরিক সক্ষমতা কত, তা দেখে নেওয়া যাক। স্থল, বিমান ও নৌবাহিনী মিলিয়ে চীনের মতো সেনা সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেই। বর্তমানে চীনের সক্রিয় সেনাসদস্য ৩৩ লাখের বেশি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাসদস্য ২৭ লাখের বেশি। রাশিয়ার সেনা বেশ কম, প্রায় ৯ লাখ।

স্থলবাহিনীতে চীনের ট্যাংকের সংখ্যা ৬ হাজার ৮০০টি। সাঁজোয়াযান রয়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি। কামান রয়েছে ৪ হাজার ৪৯০টি। আর রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা ২ হাজার ৭৫০টি। স্থলবাহিনীতে শুধু সাঁজোয়াযান বাদে বাকি সব ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আর কামান ও রকেট উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা বাদে বাকি অস্ত্রগুলোর ক্ষেত্রে চীনের চেয়ে পিছিয়ে আছে রাশিয়া।

নৌবাহিনীর সক্ষমতার দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও রাশিয়ার চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছে চীন। দেশটির বিমানবাহী রণতরি রয়েছে ৩টি। হেলিকপ্টারবাহী রণতরি রয়েছে ৪টি। শক্তিশালী ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ৫০টি। ফ্রিগেট ও করভেট রয়েছে ৪৭ ও ৭২টি। সাবমেরিনের সংখ্যা ৬১।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের পরমাণু অস্ত্র ছিল ৬০০টি। আর আগের বছর ছিল ৫০০টি।
তবে বিমানবাহিনীর সক্ষমতার দিক দিয়ে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে বেশ পিছিয়ে আছে চীন। দেশটির মোট আকাশযান ৩ হাজার ৩০৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ১ হাজার ২১২টি। হেলিকপ্টার ৯১৩টি। বিশেষ অভিযানে ব্যবহারের জন্য আকাশযান ১১২টি এবং প্রশিক্ষণ বিমান ৪০২টি।

যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া—তিন দেশেরই পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে চীনের পরমাণু অস্ত্র ছিল ৬০০টি। আর আগের বছর ছিল ৫০০টি।

অর্থাৎ পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যাও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি করছে চীন। অন্যদিকে চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ছিল যথাক্রমে ৫ হাজার ১৭৭ ও ৫ হাজার ৪৫৯টি, যা ২০২৪ সালে দেশ দুটির হাতে থাকা পরমাণু অস্ত্রের তুলনায় কম।


*চীন কি বিশ্বনেতা হতে চাচ্ছে
সেপ্টেম্বরের বিজয় কুচকাওয়াজে শুধু অস্ত্র প্রদর্শনীই করেনি চীন, সেদিন প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের পাশে ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফসহ ২৬টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানেরা।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন যে ভবিষ্যৎ বিশ্বব্যবস্থার নেতা হতে যাচ্ছে, বিজয় কুচকাওয়াজ তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত।

চীন যে বিশ্বনেতা হওয়ার দিকে এগোচ্ছে, তা বোঝা যায় ২০২৬ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশটির পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার দিকে তাকালেই। এই পরিকল্পনায় সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তির ওপর বিদেশি নির্ভরশীলতা কমাতে চাচ্ছে বেইজিং। তাদের লক্ষ্য—অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তা কাটাতে দেশীয়ভাবে সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করা।

গত মে মাসে সংঘাতের সময় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল পাকিস্তান। ভারত তা নাকচ করলেও, তাদের অন্তত একটি যুদ্ধবিমান যে ধ্বংস হয়েছিল, তা নিশ্চিত।
সেমিকন্ডাক্টর অত্যাধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান এফ–২২ ও এফ–৩৫, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার ব্যবস্থা ও এআইয়ের চিপ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয় এই সেমিকন্ডাক্টর।

চীনের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ হলো, সেমিকন্ডাক্টর তৈরিতে যে বিরল খনিজের প্রয়োজন পড়ে, তার ৬০ শতাংশই রয়েছে তাদের দখলে। এরই মধ্যে গত অক্টোবরে বিভিন্ন বিরল খনিজের ওপর নতুন করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বেইজিং। লক্ষ্য একটাই—সেমিকন্ডাক্টর খাতে আধিপত্য সৃষ্টি করা।

রাজনৈতিকভাবেও ধীরে ধীরে নেতৃত্বের ভূমিকায় যেতে চলেছে চীন। এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাচ্ছে ব্রিকস ও সাংহাই কো–অপারেশনের (এসসিও) মতো জোট ও প্ল্যাটফর্মগুলোকে। চীন যে বিশাল বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআইআই) প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তাতে সই করেছে ১৫৩টি দেশ। এর মাধ্যমেও নিজের প্রভাব বিস্তার করছে সি চিন পিংয়ের দেশ। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশে প্রভাব বাড়াতে চীনের বিনিয়োগে নানা মেগা প্রকল্প তো আছেই।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস বলছে, এমন সব কৌশল হাতে নিয়ে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে অর্থনীতির দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে চীন। আর দেশটি যেভাবে অস্ত্রশস্ত্রের উন্নতি করছে, তা ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।

শুধু সর্বাধুনিক ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান দিয়েই এই মাথাব্যথার কারণের জবাবটা দেওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রও এই যুদ্ধবিমান নিয়ে গবেষণা করছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো নমুনা সামনে আনতে পারেনি। অপর দিকে যষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান জে-৩৬-এর নমুনা আকাশে উড়িয়ে দাবার চালে এগিয়ে রয়েছে চীন।

রেনেসাঁ যুগের দার্শনিক নিকোলো মাকিয়াভেল্লি বলেছিলেন, ক্ষমতাধররা কখনোই তার সমকক্ষ চায় না। চায় না কেউ তাকে ছাপিয়ে যাক। তাহলে তো গদি নড়ে যাবে।

তবে বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমনির্ভর যে শাসনব্যবস্থা রয়েছে, তার গদি নড়াতেই চীন মহাপরিকল্পনা করছে বলে মনে করেন বার্লিনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের গবেষক ক্লাউয়াস সুং। তাঁর মতে, চীনের দিক দিয়ে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় সংস্কারটা জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ, এই ব্যবস্থার অধীনে ঘন ঘন বৈশ্বিক সংকট দেখা দিচ্ছে, আর বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।


*অন্য কোনো লাভ আছে কি
অস্ত্রের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে চীনের আরও একটি লাভ আছে। সেটি কী? একটু পেছনে যাই। গত মে মাসে সংঘাতের সময় ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছিল পাকিস্তান। ভারত তা নাকচ করলেও, তাদের অন্তত একটি যুদ্ধবিমান যে ধ্বংস হয়েছিল, তা নিশ্চিত। সদ্য ফ্রান্সের কাছ থেকে ভারত অত্যাধুনিক ওই রাফাল যুদ্ধবিমানটি কিনেছিল। সেটি ধ্বংস করেছিল পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি জে-১০ চীনা যুদ্ধবিমান।

চীনের তৈরি অস্ত্র নিয়ে পশ্চিমারা নাক সিঁটকালেও জে-১০-এর হাতে রাফাল ধ্বংসের খবর তখন সারা বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। জে-১০-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চেংদুর শেয়ারের দাম একলাফে ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়। জে-১০ এতটাই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পেরেছে যে শিগগিরই এই যুদ্ধবিমানটি কিনতে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশও এই যুদ্ধবিমান কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে বলে সম্প্রতি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দুজন প্রতিনিধি।

যদিও এখন পর্যন্ত অস্ত্র রপ্তানি বাজারে চীনের অংশীদারত্ব খুবই কম। সুইডেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) হিসাবে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে অস্ত্র রপ্তানিতে চীন চতুর্থ অবস্থানে থাকলেও এ সময়ে মোট অস্ত্রের মাত্র ৫ দশমিক ৮ শতাংশ রপ্তানি করেছিল দেশটি। অস্ত্রগুলোর ৮৫ শতাংশ গিয়েছিল এশিয়ার দেশগুলোতে। এর মধ্যে আবার ৬১ শতাংশ কিনেছিল মাত্র একটি দেশে—পাকিস্তান।

তবে আজকের দিনে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের সাহারা মরুভূমির দক্ষিণাঞ্চল চীনা অস্ত্রের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্ত্র বাজারেও প্রবেশ করছে চীন।

রাফাল ভূপাতিত করার পর জে-১০-এর চাহিদা বৃদ্ধির দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়। এ ছাড়া গত রোববার পাকিস্তানের নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফ বলেছেন, ২০২৮ সালের মধ্যে চীন থেকে আটটি হানগর-ক্লাস সাবমেরিন কেনার জন্য একটি চুক্তি করেছেন তাঁরা। চীনের অস্ত্র যদি এখন আরও অত্যাধুনিক হয়, তার বিক্রিও যে বাড়বে, সে বিষয়ে খুব বেশি সন্দেহ নেই।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজের গবেষক জ্যাকব গান্টারের মতে, রপ্তানি করা এই অস্ত্রগুলোও একধরনের ভূরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বেইজিং। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তারা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করছে। ওই দেশগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করছে। আর এভাবেই পশ্চিমা আধিপত্য ঠেকানোর লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি জোট তৈরি করছে।

২০৪৯ সালে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের শততম বার্ষিকী। ওই বছরটিকে সামনে রেখে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এক স্পষ্ট বার্তা রয়েছে। তা হলো—শততম বর্ষে চীনকে একটি আধুনিক সমাজতান্ত্রিক-শক্তিশালী-সভ্য দেশে পরিণত করা। এখন চীন যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে বলা চলে সিয়ের লক্ষ্য পূরণে হয়তো খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, ডিপ্লোম্যাট, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজ, রয়টার্স, গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর