newsbhuban25@gmail.com মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৫ আশ্বিন ১৪৩২

স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেল ফিলিস্তিন, গাজাবাসীর কি মুক্তি মিলবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৯ এএম

দীর্ঘ দশক ধরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জাতিসংঘের করিডোরে, রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে আর সাধারণ মানুষের আন্দোলনে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে।

দীর্ঘ দশক ধরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জাতিসংঘের করিডোরে, রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে আর সাধারণ মানুষের আন্দোলনে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে। কিন্তু প্রায়শই এড়িয়ে যাওয়া হয় এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—স্বীকৃতি মানে শুধু প্রেস রিলিজে লেখা কিছু শব্দ নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনগত মর্যাদা দেয়, বিশ্ব সংস্থা ও চুক্তির দরজা খোলে এবং তাদের কণ্ঠস্বরকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

প্রতিটি স্বীকৃতি তাই প্রতীকী এবং নৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এটি ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ সংগ্রামকে বিশ্ব কূটনীতির মঞ্চে দৃশ্যমান করে। তবে অভিজ্ঞ ফিলিস্তিনিরা ভালোভাবেই জানেন—শুধু স্বীকৃতি দিয়ে গাজার উপর বোমাবর্ষণ থামানো যায় না, পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় না কিংবা জেরুজালেমের অবরোধ তুলে দেওয়া যায় না।

এখানেই প্রশ্ন ওঠে: এই স্বীকৃতির পেছনে কি সত্যিকারের সদিচ্ছা আছে? নাকি এটি কেবল কিছু পশ্চিমা রাজধানীর দায় এড়ানোর কৌশল?

অনেক পশ্চিমা সরকার সহজেই বলতে পারে—‘আমরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছি।’ এতে জনমতের চাপ কমে, সংবাদমাধ্যম কিছুটা সন্তুষ্ট হয়, আবার রাজনৈতিক অগ্রগতির ছাপও পড়ে। স্বীকৃতি তখন হয়ে দাঁড়ায় এক ধরনের নিরাপত্তার ভালভ, যা বাইরে শান্তির আভাস দেয়, কিন্তু ভেতরের নীতি অপরিবর্তিত থেকে যায়। অনেকটা যেমন রোগীকে ব্যথানাশক খাইয়ে সাময়িক আরাম দেওয়া হয়, অথচ মূল রোগের চিকিৎসা করা হয় না।

তবুও এই ব্যথানাশক-সদৃশ স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক বৈধতার খাতায় একটি নতুন সংযোজন করে। যদি তা কৌশলীভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা প্রভাব ফেলতে পারে।

ইসরায়েলের প্রতি দীর্ঘদিনের নিঃশর্ত সমর্থনের পর আজ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক রাজধানী সংকটে পড়েছে। ইসরায়েলপ্রীতি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। তাই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া তাদের জন্যও সুযোগ তৈরি করছে—নিজেদের আবার আন্তর্জাতিক আইনের রক্ষক ও নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখানোর।

কিন্তু বাস্তবতা হলো—পশ্চিমারা যতটা শক্তিশালী কথা বলে, কার্যত পদক্ষেপ নেয় ততটাই সীমিত। তারা কনফারেন্সে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েলের আচরণের ওপর সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে না। ফলে স্বীকৃতি হয়ে দাঁড়ায় সাজানো ছবির মতো—যা ফাটল ধরা দেয়ালের ওপর ঝুলে থাকে, সৌন্দর্য বাড়ায়, কিন্তু দেয়ালের ক্ষত সারায় না।

অর্থবহ পরিবর্তন আসবে তখনই, যখন স্বীকৃতির সঙ্গে যুক্ত হবে বাস্তব কর্মসূচি—যেমন ইসরায়েলি বসতিতে তৈরি পণ্যকে আলাদা করা, অস্ত্র চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতে ফিলিস্তিনের মামলা সমর্থন করা।

এভাবে স্বীকৃতি হয়ে উঠতে পারে শুধু কূটনৈতিক অলংকার নয়, বরং কার্যকর হাতিয়ার।

অনেকে মনে করেন, ফিলিস্তিন স্বীকৃতি ইসরায়েলকে দুর্বল করে। কিন্তু সত্য হলো—অন্তঃসারশূন্য স্বীকৃতি ইসরায়েলের পক্ষেই কাজে লাগতে পারে। কারণ এতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভান তৈরি হয়, অথচ বাস্তবে দমন-পীড়ন, অবরোধ ও বসতি সম্প্রসারণ চলতেই থাকে।

তবে দীর্ঘ মেয়াদে স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন সুযোগও এনে দেয়। যত বেশি স্বীকৃতি জমা হয়, তত বেশি তারা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার ক্ষমতা পায়, নিজেদের ঐতিহাসিক বয়ানকে শক্তিশালী করে এবং নতুন আইনগত ও রাজনৈতিক দাবি জানানোর পথ খুঁজে পায়। এজন্যই ইসরায়েল চেষ্টা করে এই স্বীকৃতিগুলোকে শুধু প্রতীকী পর্যায়ে আটকে রাখতে।

তাই আজ দরকার প্রতীকী ঘোষণার বাইরে বাস্তব পদক্ষেপ—অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ করা, অবরোধ তুলে নেওয়া, অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা। কেবল তখনই স্বীকৃতি হয়ে উঠবে ন্যায়, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পথে এক শক্তিশালী অস্ত্র।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেল ফিলিস্তিন, গাজাবাসীর কি মুক্তি মিলবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৯ এএম

দীর্ঘ দশক ধরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জাতিসংঘের করিডোরে, রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে আর সাধারণ মানুষের আন্দোলনে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে।

দীর্ঘ দশক ধরে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জাতিসংঘের করিডোরে, রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে আর সাধারণ মানুষের আন্দোলনে প্রতিধ্বনিত হয়ে আসছে। কিন্তু প্রায়শই এড়িয়ে যাওয়া হয় এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—স্বীকৃতি মানে শুধু প্রেস রিলিজে লেখা কিছু শব্দ নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আইনগত মর্যাদা দেয়, বিশ্ব সংস্থা ও চুক্তির দরজা খোলে এবং তাদের কণ্ঠস্বরকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

প্রতিটি স্বীকৃতি তাই প্রতীকী এবং নৈতিক শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এটি ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ সংগ্রামকে বিশ্ব কূটনীতির মঞ্চে দৃশ্যমান করে। তবে অভিজ্ঞ ফিলিস্তিনিরা ভালোভাবেই জানেন—শুধু স্বীকৃতি দিয়ে গাজার উপর বোমাবর্ষণ থামানো যায় না, পশ্চিম তীরের অবৈধ বসতি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় না কিংবা জেরুজালেমের অবরোধ তুলে দেওয়া যায় না।

এখানেই প্রশ্ন ওঠে: এই স্বীকৃতির পেছনে কি সত্যিকারের সদিচ্ছা আছে? নাকি এটি কেবল কিছু পশ্চিমা রাজধানীর দায় এড়ানোর কৌশল?

অনেক পশ্চিমা সরকার সহজেই বলতে পারে—‘আমরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছি।’ এতে জনমতের চাপ কমে, সংবাদমাধ্যম কিছুটা সন্তুষ্ট হয়, আবার রাজনৈতিক অগ্রগতির ছাপও পড়ে। স্বীকৃতি তখন হয়ে দাঁড়ায় এক ধরনের নিরাপত্তার ভালভ, যা বাইরে শান্তির আভাস দেয়, কিন্তু ভেতরের নীতি অপরিবর্তিত থেকে যায়। অনেকটা যেমন রোগীকে ব্যথানাশক খাইয়ে সাময়িক আরাম দেওয়া হয়, অথচ মূল রোগের চিকিৎসা করা হয় না।

তবুও এই ব্যথানাশক-সদৃশ স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক বৈধতার খাতায় একটি নতুন সংযোজন করে। যদি তা কৌশলীভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা প্রভাব ফেলতে পারে।

ইসরায়েলের প্রতি দীর্ঘদিনের নিঃশর্ত সমর্থনের পর আজ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক রাজধানী সংকটে পড়েছে। ইসরায়েলপ্রীতি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, জনগণের ক্ষোভ বাড়ছে। তাই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া তাদের জন্যও সুযোগ তৈরি করছে—নিজেদের আবার আন্তর্জাতিক আইনের রক্ষক ও নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দেখানোর।

কিন্তু বাস্তবতা হলো—পশ্চিমারা যতটা শক্তিশালী কথা বলে, কার্যত পদক্ষেপ নেয় ততটাই সীমিত। তারা কনফারেন্সে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে আলোচনা করে, কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েলের আচরণের ওপর সামরিক বা অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে না। ফলে স্বীকৃতি হয়ে দাঁড়ায় সাজানো ছবির মতো—যা ফাটল ধরা দেয়ালের ওপর ঝুলে থাকে, সৌন্দর্য বাড়ায়, কিন্তু দেয়ালের ক্ষত সারায় না।

অর্থবহ পরিবর্তন আসবে তখনই, যখন স্বীকৃতির সঙ্গে যুক্ত হবে বাস্তব কর্মসূচি—যেমন ইসরায়েলি বসতিতে তৈরি পণ্যকে আলাদা করা, অস্ত্র চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা কিংবা আন্তর্জাতিক আদালতে ফিলিস্তিনের মামলা সমর্থন করা।

এভাবে স্বীকৃতি হয়ে উঠতে পারে শুধু কূটনৈতিক অলংকার নয়, বরং কার্যকর হাতিয়ার।

অনেকে মনে করেন, ফিলিস্তিন স্বীকৃতি ইসরায়েলকে দুর্বল করে। কিন্তু সত্য হলো—অন্তঃসারশূন্য স্বীকৃতি ইসরায়েলের পক্ষেই কাজে লাগতে পারে। কারণ এতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ভান তৈরি হয়, অথচ বাস্তবে দমন-পীড়ন, অবরোধ ও বসতি সম্প্রসারণ চলতেই থাকে।

তবে দীর্ঘ মেয়াদে স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন সুযোগও এনে দেয়। যত বেশি স্বীকৃতি জমা হয়, তত বেশি তারা আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার ক্ষমতা পায়, নিজেদের ঐতিহাসিক বয়ানকে শক্তিশালী করে এবং নতুন আইনগত ও রাজনৈতিক দাবি জানানোর পথ খুঁজে পায়। এজন্যই ইসরায়েল চেষ্টা করে এই স্বীকৃতিগুলোকে শুধু প্রতীকী পর্যায়ে আটকে রাখতে।

তাই আজ দরকার প্রতীকী ঘোষণার বাইরে বাস্তব পদক্ষেপ—অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ করা, অবরোধ তুলে নেওয়া, অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা। কেবল তখনই স্বীকৃতি হয়ে উঠবে ন্যায়, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পথে এক শক্তিশালী অস্ত্র।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর