ডিপফেকের ভিড়ে বলিউড তারকাদের ব্যক্তিত্ব অধিকার রক্ষার লড়াই

গত কয়েক সপ্তাহে বলিউডের শীর্ষ কিছু তারকা তাদের “ব্যক্তিত্ব অধিকার” (personality rights) আইনি সুরক্ষায় নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তালিকায় আছেন পরিচালক করণ জোহর, অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন এবং তার স্বামী অভিনেতা অভিষেক বচ্চন।
গত কয়েক সপ্তাহে বলিউডের শীর্ষ কিছু তারকা তাদের “ব্যক্তিত্ব অধিকার” (personality rights) আইনি সুরক্ষায় নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। তালিকায় আছেন পরিচালক করণ জোহর, অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন এবং তার স্বামী অভিনেতা অভিষেক বচ্চন।
ব্যক্তিত্ব অধিকার কী?
ব্যক্তিত্ব অধিকার বা publicity rights হলো কোনো ব্যক্তির নাম, ছবি, কণ্ঠস্বর, অঙ্গভঙ্গি, ভঙ্গিমা কিংবা কোনো বিশেষ ক্যাচফ্রেজ বা অঙ্গসঞ্চালন—যা তাকে আলাদা করে চেনায়—এসব থেকে বাণিজ্যিক বা অন্যভাবে লাভবান হওয়ার অধিকার।
এই অধিকার অন্যের দ্বারা অবৈধ ব্যবহার বা শোষণ থেকেও রক্ষা করে। অর্থাৎ, একজন তারকা তার খ্যাতি ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে উপার্জন করতে পারেন, কিন্তু তার অনুমতি ছাড়া কেউ তার ছবি দিয়ে কোনো পণ্যের প্রচার চালাতে পারবে না।
ভারতে এই অধিকার রক্ষার জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। বিচারকরা সাধারণ আইন (common law)—যা আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত—ব্যবহার করে রায় দেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মতো জায়গায় এই অধিকার আইনে স্পষ্টভাবে সুরক্ষিত।
ভারতে ছোট দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রচারে বলিউড তারকাদের ছবি ব্যবহার হওয়া সাধারণ ঘটনা।
সম্প্রতি দিল্লি হাইকোর্টে বলিউড তারকারা অভিযোগ করেছেন যে তাদের পরিচয় অবৈধভাবে মার্চেন্ডাইজিং, ভুয়া প্রোফাইল ও ওয়েবসাইট তৈরি, অশ্লীল এআই কনটেন্ট বানানোসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। আদালত তাদের অধিকার স্বীকৃতি দিয়ে এসব অবৈধ কনটেন্ট সরানোর নির্দেশ দিয়েছে।
২০২৩ সালে অভিনেতা অনিল কাপুর তার নাম, ছবি, কণ্ঠস্বর এবং বিখ্যাত “ঝকাস” ক্যাচফ্রেজ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করায় মামলা করেছিলেন।
গত বছর দিল্লি হাইকোর্ট অভিনেতা জ্যাকি শ্রফের ব্যক্তিত্ব অধিকার রক্ষা করে রায় দেয়, যেখানে তার নাম, ছবি এমনকি ডাকনাম ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
২০০২ সালে প্রথম ভারতীয় সেলিব্রিটি হিসেবে গায়ক দালের মেহেন্দি ব্যক্তিত্ব অধিকার নিয়ে আদালতে যান। তার আকৃতিতে তৈরি ব্যাটারি চালিত পুতুল বাজারে বিক্রি হচ্ছিল, যা তার গানও গাইত। আদালত সেই উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
তবে,আইনজীবীরা বলছেন, ভারতে ব্যক্তিত্ব অধিকার এখনো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হয়নি। আদালত অনেক সময় কপিরাইট, ট্রেডমার্ক, মেধাস্বত্ব আইন ও সংবিধানের মৌলিক অধিকার ব্যবহার করে এইসব মামলা বিচার করে।
অন্যদিকে জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে এই অধিকার আইন দ্বারা সুরক্ষিত। যেমন—যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যে এই অধিকার মৃত্যুর পরও পরিবারের হাতে থাকে। এলভিস প্রিসলির মৃত্যুর পর তার নাম ও ছবি ব্যবহারের অধিকার তার পরিবার পেয়েছিল।
কিন্তু ভারতে ব্যক্তিত্ব অধিকার গোপনীয়তার (privacy) সঙ্গে যুক্ত। আদালতের মতে, ব্যক্তি মারা গেলে তার গোপনীয়তার অধিকার শেষ হয়ে যায়, তাই ব্যক্তিত্ব অধিকারও থাকে না।
উদাহরণস্বরূপ, ২০২১ সালে অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর তার বাবা তার জীবনের ওপর নির্মিত একটি সিনেমা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আদালত বলেছিল, মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব অধিকার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রযোজ্য নয়।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে যদি এই অধিকার কোডিফাই (আইন আকারে স্পষ্টভাবে) করা যায় তবে মামলা পরিচালনা সহজ হবে এবং ক্ষতিপূরণের বিধান রাখা যাবে। বর্তমানে আদালত শুধু অবৈধ কনটেন্ট বন্ধ করতে পারে, কিন্তু খ্যাতি বা আর্থিক ক্ষতির প্রতিকার হয় না।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আইন কোডিফাই না হওয়ায় আদালতের ব্যাখ্যার সুযোগ বেশি থাকে, যা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে যেতে পারে। সূত্র:বিবিসি,মুম্বাই
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: