newsbhuban25@gmail.com মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে : তারেক রহমান

নিউজ ভুবন ডেস্ক প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:১১ এএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

‘চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে’ বলে মন্তব্য করে দলের একক প্রার্থীর বিজয়ে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার রাতে দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, শিগগিরই বিএনপির একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

তারেক রহমান বলেন, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নাম দলীয়ভাবে জানানো হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, অনুগ্রহ করে তাকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রত্যেকে এই দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, মনে রাখবেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিবাদ বা বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নিতে পারে।

রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে বিএনপির প্রবাসী নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য গ্রহণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়।

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত।

তারেক রহমান বলেন, প্রতি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী আপনারা যারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন, আপনারা সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী, খালেদা জিয়ার সৈনিক, বিএনপির কর্মী, ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন বা জিতছেন বা জিতবেন। বিজয়ী হবে দেশ এবং গণতন্ত্র।

নেতাকর্মীদের প্রতি আমার আহ্বান স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতি অমর্যাদা হয়, দেশ এবং জনগণের জন্য মাদার অব ডেমোক্রেসির অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয় আপনারা এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। সারাদেশে বিএনপির লাখো- কোটি সমর্থক বিব্রত হয় আপনারা কেউ এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণকে সঙ্গে রাখুন। আপনাদের সামনে আমি সেই স্লোগানটি উচ্চারণ করতে চাই, ‘ভোট দিলে ধানের শীষে দেশ গরব মিলে-মিশে।'

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানানোর পর নির্বাচন কমিশন যথাসময় নির্বাচন তফশিল ঘোষণা করবেন। জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সম্ভব সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এর অংশ হিসেবে দেশের তিনশ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।

জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব এবং সম্মানের। দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেককে প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়।

রাজপথের শরিকদেরও বিএনপি প্রার্থী করবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন।

বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাটিকে মেনে নেবেন দয়া করে। দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন। আপনাদেরকে আমি আবারও স্বাধীনতার ঘোষকের সেই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’

তারেক রহমান বলেন, শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফাসিবাদ কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সঙ্গবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয় সন্দেহ গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে হয়ত বা সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।

তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকেও যতটুকু সম্ভব যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।

অথচ আমরা দেখছি, সমগ্র দেশবাসী দেখেছেন, প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে যেভাবে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে কেমন যেন সংকটপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণীতি সম্পর্কেও আমাদেরকে সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

কৌশল-অপকৌশলে পার্থক্য বুঝতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, কৌশল এবং অপকৌশলের মধ্যে আমরা পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে আত্মসমর্থনের পথে হাঁটতে হয় কিনা বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রবাসী ভোট প্রক্রিয়া আরও সহজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাস থেকে এবারই প্রথমবার এর মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কারণে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কারো কারো কাছে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবুও প্রবাসীদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ চালু করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাই।

দেশে নারীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তারেক বলেন, এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই বিষয়টি হয়তো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে একজন মায়ের সন্তান হিসেবে, একজন নারীর স্বামী হিসেবে, একজন কন্যা সন্তানের পিতা হিসেবে বলছি। দেশে এবং বিদেশে আমাদের জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেক নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র এবং সমাজের উদাসীনতা ইদানীং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে অথবা কোথায় জানি কি একটা সন্দেহ দোলা দিয়ে উঠছে। আমি গতকালকের একটি পত্রিকায় একটি নিউজ প্রকাশিত হয়েছে, একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেই রিপোর্টে দেখলাম, গত আগস্ট মাসে সারাদেশে ৯৩ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর ভেতর সাতজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ৮৯ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।

নারী এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। আমি শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহিলা দল নয়, মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজসহ সবার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা যার যার অবস্থান থেকে আমাদের কন্যা-মা-বোনদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে এলাকাভিত্তিক প্রস্তাব তৈরি করুন, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় রাষ্ট্র অবশ্যই উদাসীন থাকতে পারে না। সরকার এবং প্রশাসন অবশ্যই ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে আমাদেরও দায়িত্ব আজ নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠনে যেকোনো অবস্থান বা ভূমিকা রাখা। নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলসহ অনেকে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে : তারেক রহমান

নিউজ ভুবন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:১১ এএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান

‘চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষায় গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে’ বলে মন্তব্য করে দলের একক প্রার্থীর বিজয়ে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রোববার রাতে দলের এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, শিগগিরই বিএনপির একক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

তারেক রহমান বলেন, পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের নাম দলীয়ভাবে জানানো হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, অনুগ্রহ করে তাকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রত্যেকে এই দায়িত্ব পালন করবেন।

তিনি বলেন, মনে রাখবেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার ওত পেতে আছে। নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিবাদ বা বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে প্রতিপক্ষ সেই সুযোগ নিতে পারে।

রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে বিএনপির প্রবাসী নেতা-কর্মীদের প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য গ্রহণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলের ওয়েবসাইটে অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এই অনুষ্ঠান হয়।

লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান পেমেন্ট গেটওয়ের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত।

তারেক রহমান বলেন, প্রতি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী আপনারা যারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন, আপনারা সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী, খালেদা জিয়ার সৈনিক, বিএনপির কর্মী, ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন বা জিতছেন বা জিতবেন। বিজয়ী হবে দেশ এবং গণতন্ত্র।

নেতাকর্মীদের প্রতি আমার আহ্বান স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতি অমর্যাদা হয়, দেশ এবং জনগণের জন্য মাদার অব ডেমোক্রেসির অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয় আপনারা এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। সারাদেশে বিএনপির লাখো- কোটি সমর্থক বিব্রত হয় আপনারা কেউ এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণকে সঙ্গে রাখুন। আপনাদের সামনে আমি সেই স্লোগানটি উচ্চারণ করতে চাই, ‘ভোট দিলে ধানের শীষে দেশ গরব মিলে-মিশে।'

তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত জানানোর পর নির্বাচন কমিশন যথাসময় নির্বাচন তফশিল ঘোষণা করবেন। জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সম্ভব সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এর অংশ হিসেবে দেশের তিনশ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।

জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব এবং সম্মানের। দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেককে প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়।

রাজপথের শরিকদেরও বিএনপি প্রার্থী করবে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন।

বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ এবং জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাটিকে মেনে নেবেন দয়া করে। দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য করবেন। আপনাদেরকে আমি আবারও স্বাধীনতার ঘোষকের সেই কথাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’

তারেক রহমান বলেন, শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফাসিবাদ কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সঙ্গবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয় সন্দেহ গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে হয়ত বা সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।

তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকেও যতটুকু সম্ভব যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।

অথচ আমরা দেখছি, সমগ্র দেশবাসী দেখেছেন, প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে যেভাবে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে কেমন যেন সংকটপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণীতি সম্পর্কেও আমাদেরকে সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

কৌশল-অপকৌশলে পার্থক্য বুঝতে হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, কৌশল এবং অপকৌশলের মধ্যে আমরা পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে আত্মসমর্থনের পথে হাঁটতে হয় কিনা বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রবাসী ভোট প্রক্রিয়া আরও সহজ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রবাস থেকে এবারই প্রথমবার এর মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কারণে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াটি কারো কারো কাছে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবুও প্রবাসীদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ চালু করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাই।

দেশে নারীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তারেক বলেন, এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে এই বিষয়টি হয়তো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে একজন মায়ের সন্তান হিসেবে, একজন নারীর স্বামী হিসেবে, একজন কন্যা সন্তানের পিতা হিসেবে বলছি। দেশে এবং বিদেশে আমাদের জনসংখ্যা প্রায় অর্ধেক নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র এবং সমাজের উদাসীনতা ইদানীং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে অথবা কোথায় জানি কি একটা সন্দেহ দোলা দিয়ে উঠছে। আমি গতকালকের একটি পত্রিকায় একটি নিউজ প্রকাশিত হয়েছে, একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে সেই রিপোর্টে দেখলাম, গত আগস্ট মাসে সারাদেশে ৯৩ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর ভেতর সাতজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ৮৯ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন।

নারী এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। আমি শুধু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মহিলা দল নয়, মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজসহ সবার মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা যার যার অবস্থান থেকে আমাদের কন্যা-মা-বোনদের সঙ্গে কথা বলুন, তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে এলাকাভিত্তিক প্রস্তাব তৈরি করুন, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয় রাষ্ট্র অবশ্যই উদাসীন থাকতে পারে না। সরকার এবং প্রশাসন অবশ্যই ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। এর পাশাপাশি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসাবে আমাদেরও দায়িত্ব আজ নারীদের জন্য নিরাপদ সমাজ গঠনে যেকোনো অবস্থান বা ভূমিকা রাখা। নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেলসহ অনেকে।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর