বক্স অফিসের রানি রাশমিকার আয় ১ হাজার ৩০০ কোটি রুপি
চলতি বছর রাশমিকা মান্দানা অভিনীত পাঁচটি সিনেমা বক্স অফিস থেকে আয় করেছে ১ হাজার ৩০০ কোটি রুপির বেশি।
গত বছরটা ‘পুষ্পা ২’ সিনেমা দিয়ে দারুণভাবে শেষ করেছিলেন রাশমিকা মান্দানা। চলতি বছরটাও যেন সেখান থেকেই শুরু করেছেন। চলতি বছর তাঁর অভিনীত পাঁচটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে; যেগুলোর মধ্যে আছে বড় দুটি হিট ছবি। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে রাশমিকাই ভারতীয় সিনেমায় বক্স অফিসের রানি।
৫ সিনেমা, কোনটির কত আয়
চলতি বছরের শুরুতে ১৪ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় লক্ষ্মণ উতেকরের সিনেমা ‘ছাবা’; এতে জুটি হয়ে হাজির হন রাশমিকা মান্দানা ও ভিকি কৌশল। ঐতিহাসিক অ্যাকশন সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই বক্স অফিসে ঝড় তোলে, এ পর্যন্ত আয় করেছে ৮০০ কোটি রুপি! ‘কানতারা: চ্যাপটার ১’–এর আগে এটিই ছিল ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ আয় করা ভারতীয় সিনেমা।
এরপর ৩০ মার্চ মুক্তি পায় ‘সিকান্দার’। এ আর মুরুগোদাস পরিচালিত সিনেমাটিতে প্রথমবারের মতো জুটি হন সালমান খান ও রাশমিকা। এ ছবিটি বক্স অফিসে সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি, আয় করে ১৭৬ কোটি রুপি।
হিন্দি সিনেমার পর দক্ষিণের মেয়ে রাশমিকা আবার ফেরেন দক্ষিণিতে, তাঁকে দেখা যায় তামিল–তেলেগু সিনেমা ‘কুবেরা’য়। শেখর কাম্মুলা পরিচালিত সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ২০ জুন। এ ছবিটিও মোটামুটি ব্যবসা করে, আয় করেছে ১১৫ কোটি রুপি।
এরপর গত ২১ অক্টোবর দেওয়ালি উপলক্ষে মুক্তি পায় ‘থামা’।
এ ছবির মাধ্যমে ম্যাডক ফিল্মসের হরর–কমেডি ইউনিভার্সে দেখা যায় অভিনেত্রীকে। ছবিতে তাঁর জুটি ছিলেন আয়ুষ্মান খুরানা। এটি প্রেক্ষাগৃহে এখনো চলছে, আয় করেছে ১৬৮ কোটি রুপি।
সবশেষ ৭ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছে রাশমিকা অভিনীত সিনেমা ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’। রাহুল রবিন্দ্রন পরিচালিত তামিল সিনেমাটিতে রাশমিকা ছাড়াও আছেন দীক্ষিত শেঠি। রোমান্টিক–ড্রামা–নির্ভর সিনেমাটি এক সপ্তাহে বক্স অফিস থেকে আয় করেছে প্রায় ৫০ কোটি রুপি।
সব মিলিয়ে চলতি বছর রাশমিকা অভিনীত পাঁচটি সিনেমা বক্স অফিস থেকে আয় করেছে ১ হাজার ৩০০ কোটি রুপির বেশি। আয়ের দিক থেকে চলতি বছর তাঁর ধারেকাছে নেই অন্য কোনো নায়িকা। অবশ্য অন্য কোনো বড় তারকার এতগুলো সিনেমা মুক্তিও পায়নি।
রাশমিকা কেন এত জনপ্রিয়
কর্ণাটকের মেয়ে রাশমিকা, ২০১৬ সালে বড় পর্দায় অভিষেকও হয় কন্নড় সিনেমা দিয়ে, এরপর করেন তেলেগু সিনেমা। সব কটিই কমবেশি ব্যবসা করেছে। তবে আলাদাভাবে রাশমিকাকে মনে রাখার কারণ ছিল না।
রাশমিকার ক্যারিয়ার নতুন গতি পায় ২০১৮ সালে তেলেগু সিনেমা ‘গীতা গোবিন্দম’ দিয়ে। অল্প বাজেটে নির্মিত এই রোমান্টিক কমেডি সিনেমাটি সুপারহিট হয়। সঙ্গে শুরু হয় বিজয় দেবরাকোন্ডার সঙ্গে জুটিও। ছবিটি তরুণ দর্শকেরা ব্যাপক পছন্দ করেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবির নানা দৃশ্য, সংলাপ নিয়ে তৈরি হয় মিম। অন্তর্জালে তাঁকে নিয়ে চর্চা বাড়তে থাকে।
এই সিনেমায় পাওয়া জনপ্রিয়তা আরও ছড়িয়ে পড়ে ‘ডিয়ার কমরেড’ দিয়ে। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ভারত কর্মার সিনেমাটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। এটি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা নয়, আবার শৈল্পিক ঘরানারও নয়। দুই ঘরানার মিশ্রণে দর্শক-সমালোচকের কাছে প্রশংসিত এক সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন নির্মাতা। ছবিতে রাশমিকাকে দেখা যায় ক্রিকেটারের চরিত্রে। এক নারী ক্রিকেটার, যে যৌন হয়রানির শিকার হয়, প্রেমিককে হারায়, এমন জটিল মনস্তত্ত্বের চরিত্র পর্দায় দারুণভাবে তুলে ধরে নিজের অভিনয়দক্ষতার জানান দেন রাশমিকা। তরুণদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরও বেড়ে যায়।
এরপর ‘সারিলেরু নিকিভারু’, ‘বিসমা’, ‘সুলতান’ ইত্যাদি সিনেমা দিয়ে সিনেমার দুনিয়ায় নিজের জায়গা আরও পোক্ত করে ফেলেন রাশমিকা।
তবে এই অভিনেত্রীর জীবন আমূল বদলে যায় ‘পুষ্পা: দ্য রাইজ’ দিয়ে। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া সুকুমারের ছবিটি দিয়ে উপমহাদেশজুড়ে পরিচিতি পান। পরের গল্পটা সবার জানা। গত বছরের ডিসেম্বরে মুক্তি পাওয়া ‘পুষ্পা ২’ সিনেমায় আবার তাঁকে পাওয়া যায় ‘শ্রীভাল্লি’ রূপে। ‘পুষ্পা ২’-তে তাঁর অভিনয়ের জায়গা ছিল আরও বেশি, সেটার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন তিনি।
সব মিলিয়ে এখন প্রযোজক ও পরিচালকদের কাছে রাশমিকার ব্যাপক চাহিদা। রাশমিকার আরেকটি সুবিধা, সব ধরনের চরিত্রে, সব ধরনের সিনেমায় তাঁকে মানিয়ে যায়। ‘গীতা গোবিন্দম’-এ তিনি পাশের বাড়ির মেয়ে টাইপ চরিত্র করেছেন, ‘ডিয়ার কমরেড’-এ হয়েছেন নারী ক্রিকেটার। আবার হিন্দি সিনেমার অভিষেকে ‘গুডবাই’-এ গ্ল্যামারহীন চরিত্র করেছেন। চলতি বছর ‘ছাবা’য় তাঁকে দেখা গেছে ঐতিহাসিক চরিত্রে। আবার ‘অ্যানিমেল’-এ নিজের ‘সুইট গার্ল’ ইমেজ ভেঙে সাহসী দৃশ্যে অভিনয়ও করেছেন।
চলতি বছর রাশমিকাকে আর কোনো সিনেমায় দেখা যাবে না। তবে আগামী বছর তাঁর অভিনীত ‘ককটেল ২’ আর ‘মাইসা’ মুক্তি পাবে।
পিংকভিলা, হিন্দুস্তান টাইমস অবলম্বনে

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: