newsbhuban25@gmail.com মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে আন্দোলনের ইতি টানলেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা

নিউজ ভুবন ডেস্ক প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:১১ এএম

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি

১১তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এমনটা কখনো দেয়নি। তাই আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করব। শহীদ মিনারে গিয়ে নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আগামীকাল থেকে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’

গত শনিবার থেকে দশম গ্রেডের দাবিতে শিক্ষকেরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাঁরা গতকাল রোববার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন তাঁরা।

তৃতীয় দিনের অবস্থান ও দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি শেষে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা শেষে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন।

শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থসচিব বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।

এর আগে রোববার সারা দেশে কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই বৈঠকে আশানুরূপ সমাধান না এলেও প্রথমে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা। তবে গভীর রাতে ফের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।

এ ঘোষণার পর আজ দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সফল করার জন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বিরতিতে রয়েছি।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কোটালীপাড়ায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি করছেন শিক্ষকেরা। তবে তাঁরা বিদ্যালয়েই আছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ময়নুর রহমান মিলন জানান, প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগঠনগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্য গাইবান্ধায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই তাঁরা পুনরায় ক্লাসে ফিরবেন।

এই তিন দফা দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। এরপর ওই দিন রাতেই শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দেশজুড়ে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন:

সম্পর্কিত খবর


অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে আন্দোলনের ইতি টানলেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা

নিউজ ভুবন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:১১ এএম

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি

১১তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এমনটা কখনো দেয়নি। তাই আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করব। শহীদ মিনারে গিয়ে নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আগামীকাল থেকে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’

গত শনিবার থেকে দশম গ্রেডের দাবিতে শিক্ষকেরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাঁরা গতকাল রোববার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন তাঁরা।

তৃতীয় দিনের অবস্থান ও দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি শেষে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা শেষে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন।

শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থসচিব বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।

এর আগে রোববার সারা দেশে কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই বৈঠকে আশানুরূপ সমাধান না এলেও প্রথমে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা। তবে গভীর রাতে ফের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।

এ ঘোষণার পর আজ দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সফল করার জন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বিরতিতে রয়েছি।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কোটালীপাড়ায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি করছেন শিক্ষকেরা। তবে তাঁরা বিদ্যালয়েই আছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ময়নুর রহমান মিলন জানান, প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগঠনগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্য গাইবান্ধায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই তাঁরা পুনরায় ক্লাসে ফিরবেন।

এই তিন দফা দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। এরপর ওই দিন রাতেই শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দেশজুড়ে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর